রবিবার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ বৈশাখ, ১৪৩১
সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি।।
সুনামগঞ্জের শাল্লা উপজেলার হবিবপুর ইউনিয়নের নোয়াগাঁও গ্রামে হেফাজতের কেন্দ্রীয় নেতা মামুনুল হকের অনুসারীরা সংখ্যালঘুদের বাড়িঘরে হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাঠের ঘটনায় শাল্লা থানায় ৮০ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা আরো ৭০০জনকে আসামী করে হবিবপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বিবেকানন্দ মজুমদার বকুল বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেন। এছাড়াও পুলিশ বাদি হয়ে শাল্লা থানায় আরো একটি মামলাসহ মোট দুটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার (১৮ মার্চ) সন্ধ্যায় এ মামলাটি দায়ের করেন।
এ ব্যাপারে শাল্লা থানার অফিসার ইনর্চাজ (ওসি) মো. নাজমুল হক মামলা দায়েরের বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়ীঘরে হামলা,ভাংচুর ও লুটপাটের ঘটনায় স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান বাদী হয়ে ৮০ জনের নাম উল্লেখ করে ৭শ জনকে অজ্ঞাত আসামী করে মামলা দায়ের করেন। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত কাউকে গ্রেফতার করা হয়নি।
একাধিক সুত্র জানায়, গত সোমবার ১৫ই মার্চ দিরাই পৌর শহরে হেফাজতে ইসলাম কর্তৃক আয়োজিত শানে রিসালত সম্মেলন উপলক্ষ্যে সমাবেশে হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় নেতা মাওলানা জুনাইদ বাবুনগীর , মাওলানা মামুনুল হকসহ কেন্দ্রীয় নেতারা বক্তব্য রাখেন। পরে মামুনুল হককে নিয়ে শাল্লা উপজেলার নোয়াগাও গ্রামের ঝুমন দাস (২৮) আপন নামে এক হিন্দু যুবক ফেসবুকে আপত্তিকর পোস্ট দিলে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। তবে সে ইসলাম ধর্ম নিয়ে কোন প্রকার মন্থব্য করেনি বলে জানা যায়।
মঙ্গলবার ১৬ই মার্চ রাতে নোয়াগাঁও গ্রামের স্থানীয়রা ঝুমন দাস আপনকে আটক করে পুলিশে দেন। পরে বুধবার ১৭ই মার্চ সকালে শাল্লা উপজেলার কাশিপুর, দিরাই উপজেলার নাছনি, সন্তোষপুর ও চন্দ্রপুর গ্রামের কয়েক হাজার মানুষজন লাঠিসোঁটা ও দেশীয় দাড়াঁলো অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে নোয়াগাঁও গ্রামের পাশে স্থানীয় ইউপি সদস্য স্বাধীন মিয়া মেম্বারের নেতৃত্বে ধারাইন নদীর তীরে লোকজন অবস্থান নেয়। পরে সেখান থেকে হাজারো লোকজন লাঠিসোঁটা ও দাড়াঁলো অস্ত্র নিয়ে নোয়াগাঁও গ্রামে গিয়ে হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজনের বাড়িঘর ও মন্দিরে হামলা চালায়। এ সময় টাকা পয়সা সোনা গহনাসহ মন্দিরে থাকা একটি কষ্টিপাতরের মূর্তি নিয়ে যায়। এক নারী হামলাকারীদের ভয়ে বাথরুমে গিয়ে দরজা বন্ধ করে থাকা অবস্থায় হামলাকারীরা বাথরুমের দরজা কেটে ঐ নারীকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করে। পরে নারী প্রাণভিক্ষা চেয়ে প্রাণে বেঁচে যান বলে গণমাধ্যমকর্মীদের জানান ঐ নির্যাতিতা নারী।
এ ব্যাপারে সুনামগঞ্জ কোর্ট পুলিশের পরিদর্শক মো. সেলিম নেওয়াজ জানিয়েছেন, আটক ঝুমন দাসকে বুধবার ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে পুলিশ আদালতে হাজির করে। পরে আদালতের আদেশে তাঁকে কারাগারে পাঠানো হয়।
ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন র্যাবের মহাপরিচালক চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন। এ সময় তিনি সাংবাদিক সম্মেলনে ঘটনার সাথে যে বা যারাই জড়িত থাকুক তাদেরকে দ্রুত আইনের আওতায় আনা হবে এবং দুবৃর্ত্তদের কঠোরহস্তে দমন করার হুশিয়ারী উচ্চারণ করেন তিনি।